ঢাকার লোকশিল্পঃ ঢাকা হচ্ছে বাংলার রাজধানী এবং ঐতিহাসিক পুরাতন শহর। পূর্ব বাংলার প্রায় সবকিছু গড়ে উঠেছে ঢাকাকে কেন্দ্র করে। তাই যেকোন লোকশিল্প ঢাকার লোকশিল্প বলেই পরিগণিত হয়।
চারু ও কারু লোকশিল্প বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প। ধর্মীয় ও সামাজিক প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে এর উদ্ভব। আলপনা, মনসাঘট, লক্ষ্মীর সরা, মঙ্গলঘট ইত্যাদি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন লোকশিল্প।
এছাড়া মানুষের শখের জন্যও গড়ে ওঠে নানা শিল্প যা লোকশিল্প নামেই পরিচিত। যেমনঃ পটচিত্র ও নানা ডিজাইনের মধ্যে আছে খেলার পুতুল, সখের হাড়ি, মাটির বৌ-পুতুল, নানা দেব দেবীর মূর্তি, মাটির হাড়ি-পাতিল, সরা, লক্ষ্মীঘট, ঢাকনা ইত্যাদি। চিত্র শিল্পের জন্যও ঢাকা বিখ্যাত, জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের ছবি, গ্রাম বাংলার দৃশ্য ইত্যাদি। এছাড়া মূখোশে আলপনা করে আকা হয় নানা ছবি যা পয়েলা বৈশাখের ঐতিহ্য প্রকাশ করে।
মাটি, কাঠ, কাপড়, সুতা, শোলা, শঙ্খ, নল, বাঁশ, বেত, শিং ইত্যাদি শিল্পকর্মও ঢাকার বিখ্যাত। এদেশের তথা ঢাকার আরেকটি লোকশিল্প যা মহিলাদের মাঝে দেখা যায় তা হচ্ছে নকশি কাথা, নকশী রুমাল টুপি, মাফলার ইত্যাদি সুচিকর্ম যা বর্তমানে বয়নশিল্পে অন্তঃভুক্ত। কাপড়ের জন্য ঢাকার মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল শাড়ী বিশ্ববিখ্যাত। এমনকি মসলিন সুতা ও কাপড় বিশ্বের আর কোথাও তৈরি হয়না। এটি ঢাকাকে দিয়েছে এক অনন্য সম্মান। আছে কাঠের তৈরি পুতুল আসবাবপত্র যা বর্তমানে চেয়ার, পালঙ্ক, আলমিরা, দরজা, জানালাতে শোভা পায়। হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে কাঠ খোদাই করে ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়; আবার কাঠের সমতল জমিনে রঙতুলি দিয়ে চিত্রও অঙ্কিত হয়। দরজার চৌকাঠ, ঘরের কাঠের খুঁটি, জানালার পাল্লা, পাল্কি, রথ, নৌকার গলুই, খেলনা পুতুল ইত্যাদি এভাবে চিত্রশোভিত করা হয়।
যেহেতু আমাদের দেশ পাটের জন্য বিখ্যাত, ঢাকা ফরিদপুর অঞ্চলে ভালপাট জন্মে। তাই ঢাকাতে পাটের দড়ি, নকশী সুতা, শিকা ইত্যাদি কাজ লোকশিল্পের অন্তর্গত।
আছে বাশে সোলা দিয়া বানানো বিভিন্ন পাত্র, ঝুড়ি ঢাকনা। খাচা, মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরনেও ঢাকা বিখ্যাত। বাশের চাটাই থেকে ঘরের বেড়া ও ধানের গলা এদেশের বিখ্যাত শিল্প।